• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

দীর্ঘ ৪টি প্লাটফরমে গণশৌচাগার না থাকায়, যাত্রী সাধারণ চরম লজাস্কর অবস্থায় পতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত

  • ''
  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০২৪

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয় পোড়াদহ রেলওয়ে জাংশন স্টেশন। এই স্টেশন নির্মাণের শুরু থেকেই যাত্রীদের সুবিধার্থে ২০টি গণশৌচাগার ছিল যার মধ্যে ২নং প্লাটফরমে ১০টি, ৩নং প্লাটফরমে ৫টি এবং ৪নং প্লাটফরমে ৫টি, ছিলো ৩টি সুইপার কলোনি, ১টি রেলওয়ে হাসপাতাল, স্টেশনে যাত্রীদের বসার বেঞ্চসহ পাকা বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে প্ল্যাটফরম সংস্কার করে অনেক বড় করা হয়েছে। স্টেশনের একমাথা থেকে আরএক মাথা যেতেও ৫-৭ মিনিট সময় লাগে। অথচ সেই প্লাটফরমে কোন গণশৌচারগার নেই। নারী ও প্রতিবন্ধীসহ সকল যাত্রীর জন্য যা একান্ত অপরিহার্য। যাত্রীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের দাবি ৪টি প্লাটফরমে আলাদা আলাদা করে অতিদ্রুত গণশৌচাগার করা হোক। ব্রিটিশ আমলের খিলান করা ছাদ ভেঙ্গে নতুন ছাদ দিলেও কিছু কিছু জায়গায় ভেঙ্গে যাওয়ায় তা যেকোনো সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে যাত্রী সাধারণের উপর পড়তে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানায়, গনশৌচাগারের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে বহুবার বলার পরও কাজ হয়নি। স্টেশনের পাকা বিল্ডিং এ ফাটল ধরেছে, যেকোনো মুহূর্তে ভেঙ্গে মাথার উপর পড়বে এমন আশঙ্কা নিয়েই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। গত ১০ বছর আগে বিল্ডিং এর ছাদ ভেঙ্গে নতুন ছাদ দিলেও ওই ছাদে ফাটল ধরেছে, প্লাস্টার চটে পড়ছে, ছাদের মরিচা পড়া, রড বের হয়ে গেছে, বিম গুলো ফেটে গেছে। মনে হচ্ছে কখন যেন ভেঙ্গে মাথার উপর পড়বে। একটি প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার আছে তাও তালামারা দেখা যায়। বিশাল স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ট্রেন ভ্রমণ করছে। প্রতি মাসে প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হলেও আজ পর্যন্ত স্টেশনে গনশৌচাগারসহ যাত্রীদের বসার জায়গা নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ট্রেন যাত্রীরা ট্রেনের অপেক্ষায় থেকে শৌচাগারের অভাবে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। প্রতিদিনই যাত্রীদের অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।

যাত্রীদের নানান কষ্ট দেখে জিআরপি থানার ওসি এমদাদুল হক স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের সহযোগিতায় ১৩টি বসার স্টিলের বেঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে। ওই বেঞ্চ এখন যাত্রীদের বসার স্থান হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছে। কুষ্টিয়ার পোড়াদহ রেলওয়ে জাংশন দিয়ে বিভিন্ন স্থানে রাত-দিন ১৪টি ট্রেন চলাচল করে থাকে। ঢাকাগামী মধুমতি ট্রেনের এক মহিলা যাত্রী শৌচাগারে যাবার জন্য ছোটাছুটি করলেও শৌচাগার না থাকায় তার কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এক বৃদ্ধ তার নাতি ছেলেকে নিয়ে স্টেশনে এসে বেকায়দায় পড়ে। নাতি ছেলে মল ত্যাগ করবে বলে দাদাকে জানালে শৌচাগারের অভাবে স্টেশনের উপরেই মল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। স্টেশনের ১ম শ্রেণির বিশ্রামাগারে শৌচাগার থাকলেও ঐ বিশ্রামাগারটি সব সময় তালাবদ্ধ রাখা হয়। যে কারণেই যাত্রীরা শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে না। শৌচাগারের অভাব দেখে সাধারণ মানুষ একটি শৌচাগার তৈরি করলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই স্থানটি লোহার পাইপ দিয়ে ঘিরে দিয়েছে।

যার কারণে ঐ শৌচাগারটিও যাত্রীরা ব্যবহার করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ও রোগীদের বহনের জন্য হুইল চেয়ার থাকার কথা থাকলেও স্টেশনে সরকারি হুইল চেয়ার নেই। বেসরকারি সাহায্য সংস্থা সাফ এর নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক প্রতিবন্ধী ও রোগীদের কথা মাথায় নিয়ে ২টা হুইল চেয়ার প্রদান করেছে স্টেশন মাস্টার নিকট। স্টেশনে নিরাপত্তা বাহিনী থাকলেও যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলেও সার্বক্ষণিক অবৈধ আয় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। সরকারি প্রতিটা অফিসে জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে এখানে কী কী সেবা দেওয়া হয় তা লেখা থাকার কথা বা সিটিজেন র্চাটার থাকার কথা তা দেখা যায় না। স্টেশন মাস্টারকে ঠিকমতো পাওয়া যায় না। সহকারী স্টেশন মাষ্টারগণ ভাগাভাগি করে ডিউটি করেন। কোন ট্রেন কখন আসবে তা ঠিকমতো মাইকিং করা হয় না।

স্টেশনে চলমান ট্রেনের আগমনের বিবরণ সম্বলিত ডিসপ্লে বোর্ড থাকা দরকার। যথাযথ পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকাও জরুরি। রেলওয়ে একটি আরামদায়ক ও নিরাপদ যাতায়াতের মাধ্যম। বাংলাদেশ রেলওয়ে পোড়াদহসহ দেশের সকল ষ্টেশনগুলোতে সম্মানিত যাত্রীদের জন্য গণশৌচারগারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণকরত: যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করা হোক এটাই সবার প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads